নির্বাচনী ঝড়ের পর নতুন নগর পিতা পেলো নিউইয়র্ক সিটি। জোহরান মামদানিময় বিগ আপেলে এখন চলছে নতুন হিসাব-নিকাশ। নবনির্বাচিত মেয়রকে বরণের অপেক্ষায় গ্রেসি ম্যানশন। সর্বত্র জয়গান প্রগ্রেসিভ ডেমোক্র্যাট মামদানিকে নিয়ে। অজানা আশঙ্কায় আছে ক্ষমতাসীন পাবলিকান পার্টি ও বিপুল বিত্তশালীরা।
গত ৭ নভেম্বর মামদানির নির্বাচনী বিজয় বক্তৃতার বার্তায় বিত্তশালীরা যেন আরেকবার নড়েচড়ে ওঠেছে। মামদানির স্পষ্ট বার্তা- শহরের অর্থনৈতিক বৈষম্যের যুগ শেষ করতে হবে। তাঁর অন্যতম পরিকল্পনা ধনীদের ওপর ২ শতাংশ অতিরিক্ত আয়কর আরোপ। তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘মিলিয়নিয়ার ট্যাক্স’।
এর আগে নির্বাচনের রাতেই মামদানি ঘোষণা দেন, ‘আমরা এমন এক সংস্কৃতির অবসান ঘটাব, যা ধনকুবেরদের- বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো লোকদের- কর ফাঁকি ও বিশেষ সুবিধা ভোগের সুযোগ দিয়েছে।’
তাঁর লক্ষ্য, এই অতিরিক্ত কর থেকে অর্জিত রাজস্ব নিউইয়র্কবাসীর জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ করে বিনামূল্যে বাস পরিষেবা এবং ভাড়া স্থিতিশীলতা (rent freeze) নীতিতে ব্যয় করা।
মামদানির এই প্রস্তাব আমেরিকার ইতিহাসে নতুন নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সর্বোচ্চ আয়কর হার ছিল ৯০ শতাংশেরও বেশি, যা দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে সহায়ক হয়েছিল। পরবর্তী দশকগুলোতে রোনাল্ড রিগান থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত প্রেসিডেন্টরা ধনীদের করছাড় দিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন।
কিন্তু মামদানির যুক্তি ভিন্ন- ‘যখন ধনীরা আরও ধনী হয়, আর শ্রমজীবী শ্রেণি পিছিয়ে পড়ে, তখন শহর টিকে না; শুধু বিলাসবহুল আকাশচুম্বী ভবন দাঁড়িয়ে থাকে।’
তবে সমালোচকদের মতে, অতিরিক্ত কর আরোপ করলে ধনীরা রাজ্য বা শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে পারে, যার ফলে কর রাজস্ব কমে যেতে পারে।
অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করেন, নিউইয়র্কের মতো শহরগুলোর অবকাঠামো, ব্যবসায়িক সুযোগ ও জীবনযাত্রার মান এমন পর্যায়ে আছে যে কেবল করের কারণে ধনীরা সহজে স্থানান্তরিত হবেন না।
২০১৯ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক এবং ইলিনয়- এই তিন রাজ্যেই কর বাড়ার পরও ধনীদের সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি।
মামদানি নিজেকে ‘ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট’ পরিচয়ে রাজনীতির মঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর বিশ্বাস, শহরের রাজস্ব কাঠামোকে ন্যায্য করে তুললে কেবল অর্থনৈতিক ভারসাম্যই আসবে না বরং রাজনৈতিক আস্থা ও নাগরিক অংশগ্রহণও বাড়বে।
তাঁর এক ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা কেবল করের প্রশ্ন নয়; এটা ন্যায়বিচারের প্রশ্ন।’
নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল ও অ্যালবানি রাজ্য আইনসভায় মামদানির এই প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক শুরু হবে শিগগিরই। রিপাবলিকানরা ইতোমধ্যে একে ‘বিনিয়োগবিরোধী উদ্যোগ’ বলে সমালোচনা করেছে, আর প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাটরা একে ‘অর্থনৈতিক ভারসাম্যের প্রথম পদক্ষেপ’ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে।
নতুন নিউইয়র্কের প্রতিশ্রুতি: মামদানির আগমন ব্যবসায়িক মহলে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কেউ তাঁকে অতিরিক্ত উদার ও অভিজ্ঞতাহীন বলে আশঙ্কা করছেন, আবার কেউ কেউ দেখছেন এক তরুণ নেতার সাহসী দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে, যিনি অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে সামাজিক ন্যায়বোধের সঙ্গে যুক্ত করতে চান।
মামদানির নীতিতে যে দিকটি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে, তা হলো ‘অ্যাফোর্ডেবল’ বা জীবনযাত্রার সামর্থ্য বজায় রাখা। তাঁর মতে, এটি কেবল সামাজিক দায়বদ্ধতা নয়, বরং ‘একটি ব্যবসায়িক অপরিহার্যতা’- কারণ একটি শহর তখনই সফল হয়, যখন তার বাসিন্দারা এখানে থাকা ও কাজ করার সামর্থ্য রাখে।
মামদানি শহরের সাশ্রয়ী আবাসন, পরিবহন ব্যয় ও শ্রমিক কল্যাণে জোর দিতে চান। তাঁর পরিকল্পনায় আছে ভাড়া নিয়ন্ত্রণের পুনর্গঠন, গণপরিবহনে বিনামূল্যে বাস সার্ভিস এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য কর-সহায়তা। তাঁর যুক্তি স্পষ্ট+ ‘শহরের অর্থনীতি টিকবে তখনই, যখন সাধারণ মানুষ ও ছোট ব্যবসাগুলো টিকে থাকবে।’
মামদানির প্রশাসনে ব্যবসায়িক সমাজের জন্য সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসতে পারে সহযোগিতামূলক সম্পর্কের সংস্কৃতি গড়ে ওঠার মাধ্যমে। তিনি চান- শহর প্রশাসন ও বেসরকারি খাত একসঙ্গে কাজ করুক, যাতে উদ্ভাবন, বিনিয়োগ ও জনকল্যাণ এক সুতায় গাঁথা থাকে।
নিউইয়র্কের ব্যবসা জগত দীর্ঘদিন ধরে ‘সিটি হল’ থেকে দূরত্ব অনুভব করেছে। মামদানি যদি তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারলে নিউইয়র্ক আবারও হতে পারে বিশ্বের উদ্ভাবনের রাজধানী।
মামদানির ‘অ্যাফোর্ডেবলিটি অ্যাজেন্ডা’ কেবল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নয়; এটি এক ব্যবসায়িক দৃষ্টি, যা নিউইয়র্ককে আবারও মানবিক ও সমৃদ্ধ করে তুলতে পারে।’
বিলিয়নিয়ারেরাও থামাতে পারেননি মামদানিকে : নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনের ফল শুধু এক প্রার্থীর জয় নয়- এটি ক্ষমতার পুরোনো কাঠামোর বিপরীতে এক নতুন চিন্তার জাগরণ।
৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি পরাজিত করেছেন রিপাবলিকান, ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী, এমনকি একদল বিলিয়নিয়ারকেও, যারা শত কোটি ডলার ঢেলেও তাঁর অগ্রযাত্রা থামাতে পারেননি।
টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তত ২০ জনের বেশি বিলিয়নিয়ার সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ক্যুমো সমর্থিত সুপার প্যাকগুলোতে অর্থ দিয়েছেন- মূল লক্ষ্য ছিল মামদানির প্রচার ঠেকানো।
এই দাতাদের মধ্যে ছিলেন ওয়াল স্ট্রিটের বড় বিনিয়োগকারী, রিয়েল এস্টেট মোগল, প্রযুক্তি উদ্যোক্তা, এমনকি কয়েকজন মিডিয়া নির্বাহীও।
তারা ভেবেছিলেন, অর্থের জোরে নিউইয়র্কের রাজনৈতিক গতিপথ আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু মাঠের বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
বলিউডের ছন্দে বিজয় উদ্যাপন : ইতিহাসে প্রথম মুসলিম ও এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র হিসেবে বিজয়ের মুহূর্তে জোহরান মামদানি যখন বক্তৃতা শেষ করলেন, তখন গোটা হল ঘরে বেজে উঠল বলিউডের জনপ্রিয় গান ‘ধুম মচালে’। উচ্ছ্বাস, আবেগ ও সংস্কৃতির মিশেলে সেই রাত যেন এক রাজনৈতিক ইতিহাসের পাশাপাশি ছিল এক সাংস্কৃতিক উৎসব।
মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মেয়র নির্বাচিত হওয়া মামদানি এভাবে একদিকে ইতিহাস গড়েছেন, অন্যদিকে ভেঙেছেন প্রচলিত সব রীতিনীতি। বক্তৃতার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাঁর ভাষা, ভঙ্গি ও আত্মবিশ্বাসে ফুটে উঠেছে এক নতুন প্রজন্মের আত্মপরিচয়- যেখানে রাজনীতি কেবল প্রশাসন নয়, বরং বহুত্ববাদ, অভিবাসী উত্তরাধিকার এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সম্মিলন।
জোহরানের বিজয় ভাষণে ছিল প্রাচ্যের কবিতা ও পাশ্চাত্যের বাস্তবতার সংমিশ্রন। তিনি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর বিখ্যাত ‘ট্রাইস্ট উইথ ডেস্টিনি’ ভাষণ থেকে উদ্ধৃতি দেনÑ ‘একটি মুহূর্ত আসে, যা ইতিহাসে বিরল, যখন আমরা পুরোনো থেকে নতুনের পথে পা বাড়াই, এবং জাতির আত্মা তার দমিত কণ্ঠ খুঁজে পায়।’
রাজনীতি ও সংস্কৃতির এই মেলবন্ধন আরও গভীর হয় তাঁর পারিবারিক উপস্থিতিতে। মঞ্চে তাঁর পাশে ছিলেন স্ত্রী রামা দুয়াজি—সিরীয় অভিবাসী পরিবারের সন্তান, যিনি বড় হয়েছেন ডালাস ও দুবাইয়ে। তাঁকে জোহরান সম্বোধন করেন আরবি শব্দে ‘হায়াতি’- অর্থাৎ ‘আমার জীবন।’ বক্তৃতা শেষে তাঁরা একসঙ্গে মঞ্চে নাচে অংশ নেন, যা দর্শকদের উচ্ছ্বাসে ভরিয়ে তোলে।
পরক্ষণেই মঞ্চে আসেন তাঁর মা, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র পরিচালক মীরা নায়ার এবং বাবা মাহমুদ মামদানি- কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আফ্রিকান স্টাডিজের গবেষক।
মীরা নায়ার তখন উজ্জ্বল নীল-সবুজ শাড়ি ও টিপ পরিহিতা, উচ্ছ্বসিত গলায় বলেন, ‘আমি প্রার্থীর প্রযোজক।’
এরপর তিনি ছেলের বাহু চুম্বন করে বলেন, ‘এই দিনটার জন্যই তো এত বছর অপেক্ষা।’
বক্তৃতার একপর্যায়ে জোহরান সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমি জানি আপনি দেখছেন, আমার আপনার জন্য চারটি শব্দ- টার্ন দ্য ভলিয়ম আপ!’
এটি ছিল যেমন রসিকতা, তেমনি প্রজন্মের ক্ষমতার পরিবর্তনের এক সাহসী ঘোষণা।
মামদানির ভাষণজুড়ে ফুটে উঠেছে নিউইয়র্কের শ্রমজীবী, অভিবাসী সমাজের প্রতিনিধিত্ব। তিনি বলেন,
‘ধন্যবাদ তাদের, যাদের রাজনীতি সবসময় উপেক্ষা করেছে- ইয়েমেনি দোকানি, মেক্সিকান দাদিমা, সেনেগালিজ ট্যাক্সিচালক, উজবেক নার্স, ত্রিনিদাদীয় রাঁধুনি, আর ইথিওপিয়ান খালারা। হ্যাঁ, খালারা!’
স্টেইনওয়ে স্ট্রিটের ‘লিটল ইজিপ্ট’ এলাকার মুসলিম জনগোষ্ঠীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আনা মিনকুম ওয়া আলাইকুম’- অর্থাৎ ‘আমরা তোমাদেরই অংশ, আর তোমরাও আমাদের।’
জোহরান মামদানির এই বিজয় কেবল রাজনৈতিক নয়; এটি সাংস্কৃতিক আত্মপ্রকাশেরও প্রতীক। উগান্ডা থেকে নিউইয়র্ক, ভারত থেকে অ্যাস্টোরিয়া- এই বিস্তৃত যাত্রাপথের প্রতিটি ধাপ তাঁর পরিচয়ের ভেতর গেঁথে আছে। তাঁর পরিধানে থাকে ভারতীয় কুর্তা, বক্তৃতায় মিশে থাকে আরবি, হিন্দি ও স্প্যানিশ শব্দ, আর প্রতিটি উচ্চারণে ঝরে পড়ে অভিবাসী নিউইয়র্কের হৃদস্পন্দন।
নিউইয়র্কের নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান: নিউইয়র্ক রাজ্যের রাজনীতিক, শ্রমিক সংগঠন ও সামাজিক প্রতিনিধিদের বার্ষিক সমাবেশ ‘সোমোস কনফারেন্স’ এবার রেকর্ডসংখ্যক মুসলিম প্রতিনিধির অংশগ্রহণের মাধ্যমে নতুন এক ইতিহাস রচনা করেছে। ৫ থেকে ৯ নভেম্বর পুয়ের্তো রিকোতে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে প্রায় ৭৫ জন মুসলিম অংশ নেন, যা কনফারেন্সের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম মেয়র মামদানির উপস্থিতি ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এই রেকর্ড অংশগ্রহণের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে নবনির্বাচিত নিউইয়র্ক সিটির মেয়র জোহরান মামদানির অংশগ্রহণ। নির্বাচনের মাত্র এক দিন পর তিনি সম্মেলনে যোগ দেন এবং তার উপস্থিতিতে সম্মেলনের আবহে নতুন মাত্রা যোগ হয়।
৭ নভেম্বর রাজধানী সান জুয়ানের স্থানীয় একটি মসজিদে জুমার নামাজে মুসলিম অংশগ্রহণ ছিল অভূতপূর্ব। নিউইয়র্ক থেকে আগত প্রতিনিধিদের পাশাপাশি স্থানীয় মুসলিম সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণে পরিবেশ ছিল উচ্ছ্বাসমুখর। অনেক অমুসলিমও উপস্থিত থেকে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হন।
নামাজ শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মামদানি বলেন, ‘শুধু প্রতিনিধিত্ব পাওয়াই যথেষ্ট নয়। এখন আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে। টেবিলে বসা মানেই ভোজে অংশগ্রহণ নয়- আমাদের খেতেও জানতে হবে।’ তার এই বক্তব্য মুসলিম সমাজে নতুন রাজনৈতিক সচেতনতার আহ্বান হিসেবে প্রতিফলিত হয়েছে।
সোমোস দীর্ঘদিন ধরে নিউইয়র্ক রাজ্যের নীতিনির্ধারকদের বার্ষিক পর্যালোচনা ও কৌশল নির্ধারণের মঞ্চ হিসেবে পরিচিত। এবারের সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের গভর্নর, অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস, কম্পট্রোলার, সিনেট মেজরিটি লিডার, রাজ্য সিনেট ও অ্যাসেম্বলির সদস্য, ইউনিয়ন নেতা এবং নিউইয়র্ক সিটি স্কুলস চ্যান্সেলর।
আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল শিক্ষা, সাশ্রয়ী আবাসন, পরিবহন, শ্রমবাজার ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা।
নিউইয়র্কের মুসলিম সমাজের এই উত্থানকে অনেকেই রাজনৈতিক নবজাগরণের সূচনা হিসেবে দেখছেন। রাইজ আপ এনওয়াইসি’র প্রেসিডেন্ট ও এনওয়াইপিডির সাবেক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার শমসুল হক বলেন, ‘মুসলিম কমিউনিটি এখন গর্বের সঙ্গে এগোচ্ছে। জোহরান মামদানির নেতৃত্বে নিউইয়র্কের রাজনীতিতে আমরা নতুন এক দিগন্তে পা দিয়েছি।’
ভিন্ন ধরনের প্রচার: মামদানির প্রচারণা ছিল রাস্তায়, বাসে, পার্কে, স্থানীয় দোকানে। তাঁর স্লোগান সহজ: ‘শহরটা সবার জন্য হতে হবে, কেবল ধনীদের জন্য নয়।’
তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ভাড়াবৃদ্ধি রোধে স্থিতিশীলতা, বিনামূল্যে গণপরিবহন, ও সার্বজনীন শিশুসেবা।
এই কর্মসূচির অর্থ জোগানোর জন্য তিনি প্রস্তাব করেছিলেন শহরের মিলিয়নিয়ারদের ওপর সামান্য করবৃদ্ধি এবং করপোরেট করের হার বাড়ানো- যা ধনীদের আতঙ্কিত করেছিল।
মামদানি বারবার বলেছেন, ‘একটা সমাজে যদি কেউ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে, আর অন্য কেউ ভাড়া দিতে না পেরে রাস্তায় ঘুমায়, তাহলে সেটি ন্যায়সঙ্গত সমাজ নয়।’
এই বক্তব্য ধনীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ালেও, সাধারণ ভোটারদের কাছে সেটাই হয়ে ওঠে তাঁর জনপ্রিয়তার মূল কারণ।
ফলাফল ঘোষণার পর নিউইয়র্কজুড়ে উৎসবের আমেজ। ব্রুকলিন, কুইন্স, ব্রঙ্কসসহ সব জায়গায় তরুণ ও শ্রমজীবী ভোটাররা একে দেখছেন ‘নিজেদের জয়’ হিসেবে।
এই জয়ে জোহরান মামদানি শুধু নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নন, তিনি এমন এক প্রজন্মের প্রতীক হয়ে উঠেছেন যারা বিশ্বাস করে রাজনীতি মানে সেবার প্রতিশ্রুতি, অর্থের দৌড় নয়।
নতুন মেয়র জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমি ধনীদের বিরুদ্ধে নই, আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে।’
মামদানির নাগরিকত্ব বাতিল দাবি ট্রাম্পের দলের: জোহরান মামদানিকে আটকানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল রিপাবলিকান পার্টি। অর্থকড়ি ঢেলে ও বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা চালিয়েও তারা সফল হয়নি।
কোনোভাবেই মামদানিকে না আটকাতে পেরে এখন তার নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি তুলছে ট্রাম্পের দল। তারা এখনো সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে তিনি যেন কোনোভাবেই দায়িত্ব নিতে না পারেন।
উগান্ডায় জন্ম নেওয়া ৩৪ বছর বয়সী মামদানি একজন কমিউনিস্ট, তিনি সন্ত্রাসীদের সমর্থন দেন এমন সব অভিযোগ আনছে রিপাবলিকান পার্টি। এসবের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও।
এরমধ্যে রিপাবলিকান প্রতিনিধি অ্যান্ডি ওগলস এবং ফ্লোরিডার প্রতিনিধি র্যান্ডি ফাইন সরাসরি দাবি করেছেন, মামদানি তার নাগরিকত্ব আবেদনের সময় মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা গোপন করেছেন।
ওগলস যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডির কাছে মামদানির নাগরিকত্ব প্রক্রিয়া তদন্ত করার এবং তাকে দেশ থেকে বের করে দিয়ে উগান্ডায় ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করেছেন।
ওগলস বলেন, ‘যদি প্রমাণিত হয় মামদানি তার নাগরিকত্বের নথিতে মিথ্যা বলেছেন, তাহলে তিনি নাগরিক থাকার যোগ্য নন এবং নিউইয়র্কের মেয়র হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মার্কিন নাগরিকত্ব পেতে হলে কমিউনিস্ট বা সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি অবশ্যই জানাতে হয়, যা তিনি জানাননি বলেই সন্দেহ।’
তবে অলাভজনক ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা পলিটিফ্যাক্ট জানিয়েছে, মামদানি তথ্য লুকিয়ে নাগরিকত্ব নিয়েছেন তারা এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ খুঁজে পায়নি।
মামদানি ১৯৯৮ সালে সাত বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং ২০১৮ সালে তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব পান।
রিপাবলিকানদের আরেকটি অভিযোগ হলো, মামদানি তার নাগরিকত্বের ফর্মে ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্টস অফ আমেরিকা (ডিএসএ) -এর সদস্যপদ গোপন করেছেন, যাকে তারা একটি কমিউনিস্ট সংগঠন বলে দাবি করছেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিএসএ কমিউনিস্ট দল নয়, এটি কমিউনিজমের বিকল্প হিসেবে উঠে আসা গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের একটি ধারা। তাই ডিএসএ-র সদস্যপদ নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করে না।
এছাড়া, মামদানির লেখা একটি র্যাপ গানের কথা তুলে ধরে তাকে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সমর্থনকারী বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে আইনজীবীরা বলছেন, এই ধরনের কথা সংরক্ষিত বাক-স্বাধীনতার অংশ, যতক্ষণ না তিনি আসলে কোনো বিদেশী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সরাসরি সাহায্য করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ডেমোক্র্যাটদের রেকর্ডব্রেকিং জয়: ৪ নভেম্বরের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ডেমোক্র্যাটদের ঝড় শুধু সংখ্যার নয়- এটি ইতিহাসেরও। নারী নেতৃত্ব, বৈচিত্র্য এবং নতুন প্রজন্মের উত্থানে মার্কিন রাজনীতি দেখল এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন।
ভার্জিনিয়া থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত- প্রথম নারী, প্রথম মুসলিম, প্রথম অভিবাসী ও প্রথম প্রজন্মের তরুণ নেতাদের জয় প্রমাণ করেছে, ভোটাররা এবার চাইছেন নতুন মুখ, নতুন ভাষা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি।
ছয়টি নজিরবিহীন অর্জন- ১. ভার্জিনিয়ার প্রথম নারী গভর্নর- অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার, ২. নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র- জোহরান মামদানি, ৩. টেক্সাসে প্রথম লাতিনা সিনেটর- রোসা গার্সিয়, ৪. মিশিগানের প্রথম খোলা সমকামী অ্যাটর্নি জেনারেল- ড্যানি ব্রুকস, ৫. ওহাইওর প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান সিনেটর- মাইকেল হেনরি এবং ৬. ক্যালিফোর্নিয়ার প্রথম এশীয়-আমেরিকান লেফটেন্যান্ট গভর্নর- এমিলি ট্রান।
এই ছয়টি জয় শুধু ব্যক্তিগত সাফল্য নয়- এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে পরিবর্তনের প্রতীক। ডেমোক্র্যাটদের এই নির্বাচনী জয় স্পষ্ট করে দিয়েছে, ভোটাররা বৈচিত্র্যকে আর ‘প্রতীকী উপস্থিতি’ হিসেবে নয় বরং ক্ষমতার কেন্দ্র হিসেবে দেখতে প্রস্তুত।
এবার লস অ্যাঞ্জেলেসে মাঠে নেমেছে ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্টরা: মামদানির ঐতিহাসিক জয় শুধু পূর্ব উপকূলে নয়, হাজার মাইল দূরের লস অ্যাঞ্জেলেসেও নতুন উচ্ছ্বাস জাগিয়েছে। সেখানে ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকা এখন তাকিয়ে জুনের স্থানীয় নির্বাচনের দিকে- বিশেষ করে সিটি কাউন্সিলের আসনগুলোতে।
তারা ইতিমধ্যে জুনের নির্বাচনের জন্য ক্যানভাসিং টিম গঠন করেছে, এলাকাভিত্তিক সভা করছে এবং শহরজুড়ে ‘গ্রাসরুট’ প্রচার চালাচ্ছে।
সংগঠনের নেতারা বলছেন, মামদানির মতো তাঁরাও চান ‘মানুষের জন্য শহর’- যেখানে গণপরিবহন, আবাসন ও স্বাস্থ্যসেবা মৌলিক অধিকার হবে, বিলাসিতা নয়।
মামদানির নিউইয়র্ক জয়কে অনেকেই দেখছেন এই প্রজন্মের সমাজতান্ত্রিক
আন্দোলনের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সাফল্য হিসেবে।
গ্রেসি ম্যানশনে উঠছেন মামদানি : নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি থাকেন কুইন্সের অ্যাস্টোরিয়ায় একটি সাধারণ ভাড়া অ্যাপার্টমেন্টে। মাসে ২ হাজার ৩০০ ডলার ভাড়ার এক বেডরুমের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি। সিঙ্ক ফুটা হয়ে পানি চুঁইয়ে পড়ছিল, তাই তোয়ালে দিয়ে মেঝে ঢাকতে হয়েছিল তাকে। দৈনন্দিন এমন গৃহস্থালি সমস্যা এবং ‘এক বেডরুম এখনকার জন্য একটু বেশিই ছোট’-সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে জোহরান এই হতাশা প্রকাশ করেছেন।
তবে এই ধরনের সাধারণ সমস্যাগুলো আর বেশিদিন তাকে সামলাতে হবে না। কারণ, নিউইয়র্ক সিটির সরকারি বাসভবন গ্রেসি ম্যানশনের বাসিন্দা হবেন শিগগিরই।
জোহরান মামদানির বর্তমান অ্যাপার্টমেন্টটি বড়জোর ৮০০ বর্গফুট হতে পারে। সেখানে রয়েছে হিটিং ও গরম পানির ব্যবস্থা, রান্নাঘরে একটি জানালা, দুটি ক্লোজেট- এমন সাধারণ কিছু আসবাবপত্র।
অন্যদিকে, গ্রেসি ম্যানশন হলো ২২৬ বছরের পুরোনো, ১১ হাজার বর্গফুটের একটি প্রাসাদ। আপার ইস্ট সাইডে ইস্ট নদীর তীরে কার্ল শুরজ পার্কে অবস্থিত এই ভবন। ঝাড়বাতির আলোয় উজ্জ্বল আয়না, চকচকে মেহগনি কাঠের দরজা, বিশাল লনে রয়েছে আপেল ও ডুমুর গাছ এবং সবজি বাগান। বাগানে অবশ্য মাঝেমধ্যেই খরগোশেরা বেশ উপদ্রব করে। এমন এক রাজকীয় আবহ রয়েছে সেখানে।
গ্রেসি ম্যানশনকে একবার নিউইয়র্ক টাইমসের একজন রিপোর্টার ‘ফ্যাকাশে লেমন কেকের মতো বাড়ি’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। এটি কেবল বাসস্থান নয়, এটি কঠোর নিরাপত্তা এবং বিলাসবহুল আয়োজনের এক অভিজাত কেন্দ্র।
বাসভবনের নিচতলাটি অত্যন্ত জমকালো ‘ফেডারেল’ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। এই স্থাপত্য নকশায় মেয়রের ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। এখানে একটি গ্র্যান্ড ফায়ারপ্লেস-সহ বিনোদন কক্ষ এবং প্যারিসের বাগানচিত্রযুক্ত ওয়ালপেপার দিয়ে মোড়ানো একটি ডাইনিং রুম রয়েছে।
মেয়রদের জন্য এখানে রয়েছে পূর্ণ-সময়ের শেফ, যিনি তার জন্য খাবার প্রস্তুত করেন। করিডরের ওপারে রয়েছে বিশাল বলরুম। ১৯৬৬ সালে এটি উদ্বোধন করা হয়।
মূল ভবনে ওপর তলায় রয়েছে পাঁচটি বেডরুম। যদিও ঘরোয়া আবহ আনার জন্য বিভিন্ন মেয়র তাদের মতো করে অভ্যন্তরীণ সজ্জা পরিবর্তন করেছেন। মেয়র বিল ডি ব্লাসিওর পরিবার আধুনিকীকরণের জন্য একজন ডেকোরেটর নিয়োগ করেছিলেন। এ ছাড়া মেয়র আব্রাহাম বিমের স্ত্রী মাঝরাতের হালকা খাবার খাওয়ার জন্য একটি ঘরকে ছোট ডাইনেটে রূপান্তরিত করেছিলেন।
মামদানির অ্যাস্টোরিয়ার অ্যাপার্টমেন্টে কোনো বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। কিন্তু গ্রেসি ম্যানশনের আসল আকর্ষণ হলো এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। উঁচু প্রাচীর, চতুর্দিকে ক্যামেরা এবং বাইরে মোতায়েন থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের দল- নিরাপত্তার এই স্তরটি নিশ্চিত করার জন্যই মেয়ররা শেষ পর্যন্ত এখানে আসতে বাধ্য হন। প্রাক্তন মেয়র বিল ডি ব্লাসিও মামদানিকে এই কারণেই গ্রেসি ম্যানশনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন: ‘নিরাপত্তার জন্য হলেও তার সেখানে যাওয়া উচিত।’
মেয়র ফিওরেলো লাগার্ডিয়া ১৯৪২ সালে প্রথম এই ম্যানশনে স্থানান্তরিত হন এবং এর নাম পরিবর্তন করে আরও সাধারণ ‘গ্রেসি ফার্ম’ রাখার চেষ্টা করেন। যদিও নামটি টেকেনি, কিন্তু তার স্ত্রী নিজে বাড়ির সমস্ত গৃহস্থালির কাজ করতেন এবং লনে পরিবারের কাপড় শুকাতেন।
তবে সাবেক মেয়র এরিক অ্যাডামস এই বাড়ির এক অন্যরকম হুমকির কথা বলেছিলেন: ‘ম্যানশনে ভূত আছে, ভাই!’
‘মামদানি স্টাইল’ অনুকরণ করছেন ডেমোক্র্যাটরা: অনলাইন ভোটারদের লক্ষ্য করে কন্টেন্ট তৈরি করে মামদানির নির্বাচনী প্রচারণা এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আর এখন স্ক্রিনজুড়ে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রার্থী ক্যামেরার দিকে ঝুঁকে ইশারা করে কথা বলছেন। তারা হয়তো কোনো ব্যস্ত রাস্তা বা দোকানের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছেন। ভিডিওগুলোতে থাকছে উ‘ ও উজ্জ্বল রঙের ফিল্টার এবং দ্রুত কাটের সম্পাদনা, যেখানে তারা একের পর এক তাদের নীতি ও বক্তব্য তুলে ধরছেন। কীভাবে কিছু ডেমোক্র্যাট প্রার্থী মামদানির স্টাইল অনুকরণ করে কন্টেন্ট তৈরি করছেন।
মামদানির নান্দনিকতা- মামদানির ভিডিওগুলো উজ্জ্বল রঙের জন্য সহজেই চেনা যায়, যা সোশ্যাল মিডিয়ার হাজারো কন্টেন্টের ভিড়ে আলাদাভাবে চোখে পড়ে। ভিডিওগুলোর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো দ্রুত কাট এবং বড় বড় শারীরিক অঙ্গভঙ্গি-যা নিয়ে মামদানি নিজেই এক ভিডিওতে মজা করে বলেছিলেন, ‘আমার টিম বলে আমি নাকি কথা বলার সময় খুব বেশি হাত নাড়াই।’
এই নান্দনিকতা অন্য ডেমোক্র্যাটদের জন্যও কাজ করেছে, যার মধ্যে রয়েছেন মিশিগানের ডেমোক্র্যাটিক সিনেট প্রাইমারির দুই প্রগতিশীল প্রার্থীও।
ডেট্রয়েটের সাবেক জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা আব্দুল এল-সায়েদ একটি ভিডিওতে বার্গার ব্যবহার করে ধনকুবেরদের অতিরিক্ত সম্পদকে তুলে ধরেছিলেন, যা মামদানির ম্যাঙ্গো লাচ্ছি ব্যবহার করে নিউইয়র্কের র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং সিস্টেম বোঝানোর ভিডিওর কথা মনে করিয়ে দেয়। একইভাবে, স্টেট সিনেটর ম্যালরি ম্যাকমোরো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করে ভাইরাল হয়েছিলেন, যা মামদানির মুদি দোকানে ঘোরার ভিডিওর কথা মনে করায়।
ডেমোক্র্যাটিক স্ট্র্যাটেজিস্ট অ্যান্ড্রু মামো, যিনি ম্যাকমোরো এবং টেক্সাসের স্টেট রিপ্রেজেন্টেটিভ জেমস টালারিকোকে পরামর্শ দিচ্ছেন, তিনি দৃশ্যমান আকর্ষণীয় কন্টেন্টের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।
মামো ব্যাখ্যা করেন, ‘আপনাকে বুঝতে হবে, আপনি শুধু প্রাইমারিতে অন্য ডেমোক্র্যাটদের সাথেই প্রতিযোগিতা করছেন না। আপনি শুধু রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধেও লড়ছেন না। আপনি কুকুরের ভিডিও, খেলার হাইলাইটস, আপনার অন্য টেলিভিশনে চলা নেটফ্লিক্স, আপনার ফোনে আসা ফেসটাইম কল এবং গ্রুপ চ্যাটের সাথে মনোযোগের জন্য প্রতিযোগিতা করছেন।’
মূল বিষয়বস্তু: জীবনযাত্রার ব্যয়- মামদানির প্রচার দলের মতে, তাদের সাফল্যের পেছনে জীবনযাত্রার ব্যয় বা সাশ্রয়ী মূল্যের ওপর নিরলস মনোযোগ দেওয়াটাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রচারণার এক শীর্ষ সহযোগী অ্যান্ড্রু এপস্টাইন বলেন, ‘স্টাইলটা আসে মূল বিষয়বস্তুর পর।’
নিজস্ব সংবাদ : 




















