আল্লাহ তাআলা মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তাঁর ইবাদাত বা নিঃশর্ত আনুগত্য করার জন্য। আল্লাহ মানুষকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করে থাকেন। মানুষ জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে ঘাত-প্রতিঘাত, দুঃখ-কষ্ট, হতাশা, দুশ্চিন্তার মুখোমুখি হয়ে থাকে। কিন্তু এটাও মুমিন-মুসলিমের জন্য কল্যাণকর। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুসলিম বান্দার ওপর রোগ-শোক, দুঃখ-কষ্ট, দুর্ভাবনা যাই আসুক, এমনকি যে কাঁটা তার গায়ে বিঁধে তার বিনিময়ে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করেন।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি ও আবু দাউদ)
কোরআন ও সুন্নাহতে হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি লাভের জন্য বেশ কিছু উপায় বলে দেওয়া হয়েছে, যা নিম্নরূপ—
১. আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা। আল্লাহ বলেন, ‘যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তাঁর জন্য তিনিই যথেষ্ঠ।’ (সুরা আত তালাক, আয়াত : ৩)
২. সালাত ও ধৈর্যের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করা। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। আর তা আল্লাহভীরু ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্য সকলের কাছে নিশ্চিতভাবে কঠিন।’ (সুরা আল বাকারা, আয়াত ৪৫)
৩. আল্লাহর জিকির করা। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর জিকিরেই অন্তরগুলো প্রশান্ত হয়।’ (সুরা আর রাদ, আয়াত ২৮)
৪. বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে শয়তানের ধোঁকা, প্ররোচনা, হতাশা থেকে বাঁচার চেষ্টা করা। রাসুল (সা.) একটি চমৎকার দোয়া আমাদের শিখিয়েছেন। দোয়াটি হলো, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া দলা‘ইদ দাইনি ওয়া গলাবাতির রিজালি।’ (অর্থ হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ-বেদনা হতে, অক্ষমতা ও অলসতা হতে, ভীরুতা ও কৃপণতা হতে এবং ঋণের বোঝা ও মানুষের জবরদস্তি হতে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৮৯৩)
৫. তাকদিরে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা ও হতাশ না হওয়া। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমার প্রতি যা ঘটেছে, তা তোমার ভুলের জন্য ছিল না; আর যা তোমার ভুলের জন্য হয়েছে, তা তোমার ভাগ্যে ছিল না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৯৯)
৬. তাহাজ্জুদের সময় ইস্তিগফার ও কেঁদে আল্লাহকে নিজ কষ্টের কথা বলা। আল্লাহ বলেন, ‘আর তারা (মুত্তাকিরা) রাতের শেষ প্রহরে ক্ষমা প্রার্থনা করতো।’ (সুরা জারিআত, আয়াত ১৮)
৭. সৎ সঙ্গী ও ভালো পরিবেশ বেছে নেওয়া। কারণ সত্ ব্যক্তির সাহচর্য হতাশাকে দূর করে এবং ঈমানকে জাগ্রত করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে গড়ে উঠে। সুতরাং তার বন্ধু নির্বাচনের সময় এ বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত, সে কাকে বন্ধু নির্বাচন করছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৮)
৮. অল্পে তুষ্ট থাকা। অল্পে তুষ্ট হওয়ার গুণ জীবনকে সুখময় করার বড় হাতিয়ার। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম, পরকালের তুলনায় দুনিয়ার উদাহরণ হলো, তোমাদের কেউ সাগরের মধ্যে নিজের একটি আঙুল চুবানোর পর লক্ষ করে দেখুক আঙুল কী পরিমাণ পানি নিয়ে এলো?’ (মুসলিম, হাদিস : ৫১৫৬)
৯. নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত ও আমল করা। আল্লাহ বলেন, ‘কোরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে শিফা (আরোগ্য) ও রহমত বা দয়া।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৮২)
১০. ইতিবাচক চিন্তা ও কল্যাণমূলক পরিকল্পনা করা। হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘বান্দা আমার প্রতি যেমন ধারণা রাখে, আমি বান্দার প্রতি সেই রূপ আচরণ করি।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৯০১)
১১. বেশি বেশি ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। আল্লাহ বলেন, ‘সাজদাহ করো ও আমার নিকটবর্তী হও।’ (সুরা আল আলাক, আয়াত : ১৯)
উপর্যুক্ত আমলগুলো নিয়মিত করলে হতাশা দূর হবে, ইনশাআল্লাহ।
লেখক: চিকিৎসক, ইবনে সিনা হাসপাতাল, ঢাকা।
নিজস্ব সংবাদ : 




















