তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের সর্বোচ্চ বিন্দুতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে দেশটির সবচেয়ে বড় ও মনোমুগ্ধকর স্থাপত্যের নিদর্শন—চামলিজা মসজিদ (Çamlıca Mosque)। শহরের এশীয় অংশের উস্কুদার এলাকায় অবস্থিত এই সুবিশাল স্থাপনাটি এর মনোরম অবস্থান এবং স্থাপত্যশৈলীর জন্য ইস্তাম্বুলের প্রায় সব প্রান্ত থেকেই দৃশ্যমান।
মসজিদটি অটোমান ও সেলজুক স্থাপত্যরীতির এক অসাধারণ ও আধুনিক সংমিশ্রণ ঘটিয়ে তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে নির্মিত এই মসজিদ একই সঙ্গে প্রায় ৬৩ হাজার মুসল্লিকে নামাজ আদায়ের সুযোগ করে দেয়। এর প্রধান স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
মিনার: মসজিদটিতে রয়েছে ছয়টি সুউচ্চ মিনার, যা এর বিশালতাকে ফুটিয়ে তোলে।
অভ্যন্তরীণ কারুকাজ: চামলিজা মসজিদের গম্বুজ ও অভ্যন্তরীণ দেয়ালজুড়ে রয়েছে সূক্ষ্ম কারুকাজ, পবিত্র কোরআনের আয়াত, এবং খোলাফায়ে রাশেদিন ও সাহাবিদের নামের নকশা। ভেতরের গম্বুজের অপূর্ব শিল্পকর্ম প্রত্যেক দর্শনার্থীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
পার্কিং: বিশাল সংখ্যক মুসল্লির আগমনকে মাথায় রেখে এখানে ৩ হাজার গাড়ি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি সুবিশাল পার্কিং ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
তুরস্কের এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ২০১৯ সালের মে মাসে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এই মসজিদটি উদ্বোধন করেন। সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশের প্রতিনিধি ও মুসলিম ব্যক্তিত্বরা অংশ নিয়েছিলেন, যা এর বৈশ্বিক গুরুত্ব তুলে ধরে।
চামলিজা মসজিদ কেবল একটি উপাসনালয় নয়, বরং এটি তুরস্কের আধুনিক স্থাপত্য ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের এক গৌরবময় প্রতীক হিসেবে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত।
সাংস্কৃতিক কেন্দ্র: চামলিজা শুধু মসজিদ নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স। এখানে রয়েছে একটি আধুনিক ইসলামী জাদুঘর, শিল্পকলা প্রদর্শনীকক্ষ, সম্মেলনকেন্দ্র ও বিশাল গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারটিতে সংরক্ষিত আছে হাজার হাজার ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও শিল্পবিষয়ক বই।
নামাজ আদায় ছাড়াও মসজিদটির সৌন্দর্য উপভোগ ও ইসলামী সংস্কৃতির স্পর্শ পেতে প্রতিদিন চামলিজা মসজিদে ভিড় জমান হাজারো মানুষ। কেউ গম্বুজের নিচে দাঁড়িয়ে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি খোঁজেন, কেউ আবার শিল্প প্রদর্শনী ও জাদুঘরে ঘুরে দেখেন ইসলামী ঐতিহ্যের বিভিন্ন নিদর্শন।
নিজস্ব সংবাদ : 




















