ঢাকা ০২:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগের শরিকরা অনিশ্চিত গন্তব্যে একাধিক দলের কার্যালয় তালাবদ্ধ * ভাড়া দিতে না পারায় অফিস বন্ধ করে দিয়েছে একাধিক দল

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৯:৪১:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫
  • ৬২ বার পড়া হয়েছে

অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলো। শেখ হাসিনার শাসনামলে যারা বীরদর্পে দাপিয়ে বেড়াত, মন্ত্রিসভা থেকে শুরু করে সংসদ-সর্বত্র যাদের ছিল অবাধ বিচরণ; রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তারা এখন অনিশ্চিত গন্তব্যে হাঁটছেন। কী আছে ভাগ্যে-জানেন না এই দলগুলোর নেতাকর্মীরাও।

২০০৫ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সেই সময়কার চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলনের ঐক্য হিসাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত হয় ১৪ দলীয় জোট। বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে ২৩ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে বাম প্রগতিশীল ঘরানার কিছু রাজনৈতিক দলকে নিয়ে এই জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে ওই বছরের ১৫ জুলাই। গত ১৯ বছরে নানা টানাপোড়েন এবং কয়েক দফা ভাঙাগড়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত এই জোটের শরিক দলের সংখ্যা ছিল ১৩টি, যাদের মধ্যে নয়টিই বাম ঘরানার রাজনৈতিক দল হিসাবে পরিচিত।

দলগুলোর মধ্যে রয়েছে-বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ, সাম্যবাদী দল (এমএল), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), গণতন্ত্রী পার্টি, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ-রেজাউর) ও কমিউনিস্ট কেন্দ্র। পরে এই জোটে সম্পৃক্ত হয় আরও তিনটি রাজনৈতিক দল-জাতীয় পার্টি-জেপি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশ। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশের কার্যালয় দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ। আর্থিক সংকটের কারণে ভাড়া দিতে না পারায় কার্যালয় ছেড়ে দিয়েছে সাম্যবাদী দল (এমএল)। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), গণতন্ত্রী পার্টি, গণআজাদী লীগ এবং গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির কার্যালয়ও অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। কালেভদ্রে তারা অফিস খুললেও নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। ১৪ দলীয় জোটের মধ্যে শুধু জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি-এই দল দুটি নিয়মিত ঘরোয়া কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালানোর পর ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা নিয়েই এখন সংকটে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে কোনো কোনো শরিক বাম দলে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এ মুহূর্তে ‘গণরোষের ভয়ে’ কোনো দলই নামছে না মাঠের কর্মসূচিতে। গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী এক বছরেরও বেশি এসব দল রাজনৈতিকভাবে কার্যত বিচ্ছিন্ন ও নিষ্ক্রিয়, অনেকটাই ছন্দহারা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বাম প্রগতিশীল ঘরানার রাজনৈতিক দলের মধ্যে বড় একটি অংশ ১৪ দলীয় জোটের ব্যানারে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল। গত বছর ৫ আগস্ট জোটের প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার করুণ পরিণতি দেখে তারা শুধু হতাশই নন, আওয়ামী লীগের মতো নিজেরাও এখন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। বলা চলে, হতাশা ভর করেছে এ দলগুলোয়। জোটের শরিক প্রভাবশালী বামপন্থি নেতা বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু জুলাই-আগস্টে সংঘটিত একাধিক হত্যা মামলার আসামি হয়ে কারাবন্দি। দুর্নীতি-লুটপাটসহ নানা অভিযোগ ওঠায় এ দুই সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি হয়ে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের শীর্ষ নেতা ফজলে হোসেন বাদশা, শিরিন আখতারসহ সারা দেশের বেশির ভাগ নেতাকর্মী আত্মগোপনে। এ অবস্থায় তাদের টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর একজন সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে সোমবার যুগান্তরকে বলেন, আচমকা ক্ষমতা হারিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেই ধুঁকছে। বাম ঘরানাসহ জোটের অন্য শরিক দলগুলোর ভাগ্যেও নেমে এসেছে বিপর্যয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ আমাদের জানা নেই।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সোমবার যুগান্তরকে বলেন, বৈরী পরিবেশে রাজনীতি করার অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক সরকারের শাসনামলেও আমাদের দলীয় কর্মকাণ্ড নিজেদের মতো করে অব্যাহত রেখেছি। অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারায় আগের মতোই জাসদ অবদান রাখবে।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।

‘ধর্মের নামে রাজনীতির করা একটি দলের হাতে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছেন’

আওয়ামী লীগের শরিকরা অনিশ্চিত গন্তব্যে একাধিক দলের কার্যালয় তালাবদ্ধ * ভাড়া দিতে না পারায় অফিস বন্ধ করে দিয়েছে একাধিক দল

আপডেট সময় ০৯:৪১:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫

অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলো। শেখ হাসিনার শাসনামলে যারা বীরদর্পে দাপিয়ে বেড়াত, মন্ত্রিসভা থেকে শুরু করে সংসদ-সর্বত্র যাদের ছিল অবাধ বিচরণ; রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তারা এখন অনিশ্চিত গন্তব্যে হাঁটছেন। কী আছে ভাগ্যে-জানেন না এই দলগুলোর নেতাকর্মীরাও।

২০০৫ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সেই সময়কার চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলনের ঐক্য হিসাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত হয় ১৪ দলীয় জোট। বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে ২৩ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে বাম প্রগতিশীল ঘরানার কিছু রাজনৈতিক দলকে নিয়ে এই জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে ওই বছরের ১৫ জুলাই। গত ১৯ বছরে নানা টানাপোড়েন এবং কয়েক দফা ভাঙাগড়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত এই জোটের শরিক দলের সংখ্যা ছিল ১৩টি, যাদের মধ্যে নয়টিই বাম ঘরানার রাজনৈতিক দল হিসাবে পরিচিত।

দলগুলোর মধ্যে রয়েছে-বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ, সাম্যবাদী দল (এমএল), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), গণতন্ত্রী পার্টি, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ-রেজাউর) ও কমিউনিস্ট কেন্দ্র। পরে এই জোটে সম্পৃক্ত হয় আরও তিনটি রাজনৈতিক দল-জাতীয় পার্টি-জেপি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশ। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন এবং বিকল্পধারা বাংলাদেশের কার্যালয় দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ। আর্থিক সংকটের কারণে ভাড়া দিতে না পারায় কার্যালয় ছেড়ে দিয়েছে সাম্যবাদী দল (এমএল)। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), গণতন্ত্রী পার্টি, গণআজাদী লীগ এবং গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির কার্যালয়ও অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। কালেভদ্রে তারা অফিস খুললেও নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। ১৪ দলীয় জোটের মধ্যে শুধু জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি-এই দল দুটি নিয়মিত ঘরোয়া কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালানোর পর ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা নিয়েই এখন সংকটে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে কোনো কোনো শরিক বাম দলে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এ মুহূর্তে ‘গণরোষের ভয়ে’ কোনো দলই নামছে না মাঠের কর্মসূচিতে। গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী এক বছরেরও বেশি এসব দল রাজনৈতিকভাবে কার্যত বিচ্ছিন্ন ও নিষ্ক্রিয়, অনেকটাই ছন্দহারা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বাম প্রগতিশীল ঘরানার রাজনৈতিক দলের মধ্যে বড় একটি অংশ ১৪ দলীয় জোটের ব্যানারে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল। গত বছর ৫ আগস্ট জোটের প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার করুণ পরিণতি দেখে তারা শুধু হতাশই নন, আওয়ামী লীগের মতো নিজেরাও এখন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। বলা চলে, হতাশা ভর করেছে এ দলগুলোয়। জোটের শরিক প্রভাবশালী বামপন্থি নেতা বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু জুলাই-আগস্টে সংঘটিত একাধিক হত্যা মামলার আসামি হয়ে কারাবন্দি। দুর্নীতি-লুটপাটসহ নানা অভিযোগ ওঠায় এ দুই সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি হয়ে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের শীর্ষ নেতা ফজলে হোসেন বাদশা, শিরিন আখতারসহ সারা দেশের বেশির ভাগ নেতাকর্মী আত্মগোপনে। এ অবস্থায় তাদের টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর একজন সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে সোমবার যুগান্তরকে বলেন, আচমকা ক্ষমতা হারিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেই ধুঁকছে। বাম ঘরানাসহ জোটের অন্য শরিক দলগুলোর ভাগ্যেও নেমে এসেছে বিপর্যয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ আমাদের জানা নেই।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সোমবার যুগান্তরকে বলেন, বৈরী পরিবেশে রাজনীতি করার অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক সরকারের শাসনামলেও আমাদের দলীয় কর্মকাণ্ড নিজেদের মতো করে অব্যাহত রেখেছি। অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারায় আগের মতোই জাসদ অবদান রাখবে।


Notice: ob_end_flush(): Failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home/somokontho/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471